Thursday, September 13, 2018

একগুচ্ছ কবিতা তাপস বিশ্বাস






'There is a jungle in the King's brain'

 ll চোখে তার রাজা পার হয়ে যায় ll

অভিভাবকের নীচে ঘুম আসছে
হাওয়ায় ঘুলিয়ে উঠছে মৃদু ফরাসের জান
ঘন পাতার ভেতর পরবর্তী যাওয়াটুকু নেই—
মুনিয়ার ধরন উড়ে গিয়ে জানিয়ে দিল

পাতার মাথায় রাত অন্ধ চাকুর মতো ঢলতে ঢলতে
ফেঁড়ে দিচ্ছে সবুজ অপেরা
আশেপাশে করতল বানান ধরা আছে
জল ধরা আছে
সেই জলহাওয়া যথেষ্ট নিলে আত্মজা হয়
তার আন্তরিক চোখে পায় হুঁশ — জীবনের নীচু কুয়ো

দু'একটা ইচ্ছামৃত্যুর পাতা এরকম 
ঝুঁকে ঝুঁকে দেখতে থাকি, চোখে দেখতেই থাকি—
বাকি সব হরফের দিনে
সে কেমন রাজা রাজা পার হয়ে যায়
 


ll  না হয়ে থাকছ , হ্যাঁ হয়ে থাকছ  ll

অসহ্য শাদাভাবে আসছ
পুরুষের বৈধব্যগুণ পেরিয়ে চোখের রস মরে যাচ্ছে
অনেকদিন দেখিনি অথচ এমন দেখা হচ্ছ
চোখে হাত লাগলেই রূপক হয়ে যাচ্ছে

মায়াশৈশবে কিছুটা ধরে এলে পথে নবাব হয়
সিঁদুর ধরেছে এমনকী সর্বক্ষণের গাছ
আর দেখছি
সারাদিন সবুজ বাঁধা মথে তার পাতা খাচ্ছি

এই যে না হয়ে থাকছ, হ্যাঁ হয়ে থাকছ
আরও কিছু অমোঘ চুমুকে চোখগুলো মণি বাজাচ্ছে
দৃষ্টির হাঁটু অবধি তার কোনো টান নেই

সিঁথি শাদা বাক্য ছাড়া আর কোনো টান নেই
          

ll  রাত  ll

তোমাকে পড়ছি 
তামায় আলোর ব্যথাগুলো পাচ্ছে
আমাদের জাগরণ মুদ্রায় সমভাবে
একটা কালো থাকে
কান্নার একটা কনট্রাস্ট থাকে 
ঠিক যেভাবে 
না থাকলে যেমন আমাদের আর বৃষ্টিতে পায় না
তোমাকে পড়ছি তাই ছাপিয়ে উঠছি 
সেও যেন তারাদের স্তনাগ্র সমান

এ গ্রহণ তো ভার্জিন 
তবু অন্ধকার অনুচ্চারে তার দুধ ভরে দেয়


ll  পথ  ll

পথ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না পা, ধুলো উড়ছে
কেমন তারা তারা হয়ে যাচ্ছে বোসন কণাগুলো
গায়ে এসে পড়েছে যখন রোদের ফণা

দৃষ্টিটিকে প্রশ্নে রাখা যায়—

পথের ভেতর খোলা থাকে পথ
যেমন গ্রহণ, তারও এক ভিন্ন মুখ

তারার ভেতর অন্য এক সম্ভবনা আছে

এমন বাইরে থেকে ধরলে
আমাদের শুধু তারামণ্ডলে পায়


ll  ফল  ll

বাতাসে না-হওয়া সম্মতিটিকে প্রেম দেওয়া যায়
পাতা পাতা দাগ ওঠে গাছের সাজে
সবুজ কুলায়
থাকাটুকু ধরে রাখে এই শ্রম 
ইশারা যেন তেমনই কোনো মঞ্জরীময়
গাছের বশে এতখানি সংকেত আছে
জব্দ গ্রহে গ্রহে চোখ ধরে যায়
গ্রহান্তরে রটে গ্যাছে অনেক—
বোঝাবার মতো করে আমাদের ফল এসে যায়


ll  স্নানে ঈশ্বরী উধাও হলে  ll

স্নানে হাত রেখে দেখেছি ঈশ্বরী উধাও
শুধু চোখে চোখে কিছুটা সাবান হল
ভাষা হল
এখন যে গন্ধে হব তার ঘ্রান নেই
খুলিতে ভিজে যাওয়া কাপড়ের দাগ
তার ঝড় ছিঁড়ে নেমে আসি

ঈশ্বরী আরামের ভাপ উবে গেলে
মহিমা ফেনাগুচ্ছে লিখে রেখে দিই
আগত দশকের গৃহলক্ষীটি

এখন বলে ফেলা স্তবকে হাঁটাচলা করি—
শাদা কথকতা নীরব গমকে গমকে
          

ll  সেলাইকল  ll

অবিকল জুড়ে যাব
শরীরে এমনই উপমার সুতো আসে
সেলাইয়ের শব্দে উড়ছে
মাছির মতো শাদা সঙ্গম 
সুরুচিবসনে এত বড় মনে হয়
যেন গিলতে পারব না সদ্যমৃতভাষী নীল
শরীর বানাবার মন্থর পেতে রাখি
মেরু পেকে আছে 
অবিকল হয়ে আছে সম্মত ভাঁজ
সুচ টেনে বাঁধে দু'তরফ — জ্বলেছে 
যেন সম্বিতে ফেরা ভাঙা মানুষের রিপু
        _

ll  নদীর প্রতিশব্দের কাছে  ll

নদীর প্রতিশব্দের কাছে বসে আছি
বিকেলের কিছু ধুয়ে যাওয়া গাছ
চোখের উপর ভাঙা ভাঙা জলমুদ্রায় ঢুকে এল

চোখে নতুন শব্দ নিচ্ছে না সব, ফিরিয়ে দিচ্ছে 
আকাশে শেষ কবে দেখা তরুণী পাখিদের জট—
কে কোন দেশের সেই হিসেবেই মরে যাচ্ছে পলক

ভাবছি এই আকাশ পেরনো জল চোখে চোখে 
কোন গভীরে নেয়
নদীর সমস্তটুকু লেখা হয়ে গেলে পাথরে যেতে যেতে 
পাখিদেরও গোটা দেশ ধুয়ে যায়

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। ...