Friday, September 14, 2018

কবিতাগুচ্ছ সুদীপ চট্টোপাধ্যায়







জলের স্মৃতি

আমাদের রক্ত তৈরির কারখানা থেকে বেরিয়ে আসছে অন্য কারো ছায়া—মেধাবী ও গোল
বেরিয়ে আসছে এমন সব হাওয়াজালক যাদের সঙ্গে আমাদের খোলা জানলারা কোনওদিন
কথা বলেনি—বিপরীতে কবেকার ত্রুবাদুর, কবেকার বীরগাথা মৃদু সুরে কুয়াশা বাজায়

হে অনেক নাবিকের দেশ, মদ ও নারীর ভেতর কেবলই ধাতব খনিজ খুঁজেছ তুমি
সঙ্গমের আগে ও পরে ছড়িয়ে দিয়েছ স্থূল ও লম্বা যুদ্ধের ইতিহাস  
আমাদের রক্ত তৈরির কারখানা থেকে লণ্ঠনের নরম শিখা কবে যেন খোলস ছেড়েছে

আর জলে ও জঙ্গলে পড়ে আছে অনাবিল কাড়ানাকাড়ার শব  
স্নানবিম্ব। যত্ন তুলে রাখি আর শরীর অশ্রুময়
রাধা আসে, আসে ধারা

তুমি নেই—এমনই উঠোন নিয়ে আমাদের রোদ্দুর ক্রমশ গরিব হল
শীত এল। এল যে পশমবেলা, গোড়ালি ডুবিয়ে দেখি নাকছাবি পড়ে
আছে একলা দূরের মাঠে

হাতে তার নিরীহ কুরুশ—সূর্য বুনতে বুনতে পড়ে এল বেলা
জিভ ও লালার এই কারুকাজ কীভাবে তৈরি করে নরম পোশাক
রাত আসে—
খুলে ফেলি। দেখি দেহ, দেখি ত্বক—আখরে আখরে তার স্নানধারাপাত
 
কৃপাণ ফলের নাম। ফল জানে কতবেশি তক্ষক ভিতরে রয়েছে তার
আছে হেম—করুণ সেলাই
হৃদয় নামিয়ে নিলে দিকে দিকে জয়ের পতাকা ওড়ে
ওড়ে মরু, ঝড়, তাল ও তমালসারি
পাতাটি তোমার দেশ—ব্যথারং

আহার করেছ যেই অমনি ফলের নাম শানিত কৃপাণ
আমুল বিদ্ধ করে, রাহাজানি, গোপন গুহার থেকে সবেগে গড়িয়ে নামে
                                                                আঁধারতটিনী

সেও আসে। আসে তার বিম্ব। তখন জাদুকর মুদ্রা গুনে বলে দেন বালিঘড়ির সময়
হাত একটা উপমা হয়ে ওঠে, নাভি বরাবর তোমাদের রাস্তাগুলোর গন্তব্য বদলে যায়
এত রেড জোন, এত ছায়ার শহর—দাঁত ও জিভের কারুশিল্প নিয়ে একএকটা ফ্ল্যাট
কী ভীষণ উড়তে থাকে, আর শরীর ছেড়ে দিলে লাফ দিয়ে উঠে যায় আকাশে

আকাশ চতুর প্রাণী—কেবলই উড়াল বোঝে, মাংস ও মেদ পৃথক করে
দেখায় হিসেব। ঝাঁকি দিলে নড়ে ওঠে টাকাগাছ—টুপাটাপ পাখি ঝরে

আর ফ্ল্যাটগুলো পুনরায় ঢাকা পড়ে মাইল মাইল বরফের নীচে


কথাফুল, ফেলে রাখি। অতঃপর একএকটা ট্রামলাইন ধরে হারিয়ে যায় মেষপালকেরা
হলুদ ঈশ্বর তোমার সদ্য টুকরো হাতে নিয়ে দেখি তখনও উষ্ণ আছে আমাদের লোভ ও অবসাদ
ঘাসের পাতলা ফিনিফিনে ঠোঁট শুষে নিচ্ছে হালকা রোদ্দুর— এভাবেই সন্ধে আসে
আমাদের একান্ত শহরে
আর সন্ধে নামলেই টিভির ভেতরে এসে কারা যেন পরে নেয় তাদের লাল হয়ে যাওয়া দাঁত 
খুলে রাখে ব্যক্তিগত মাথা

তখন ঘরবাড়ি রান্না করে ঘুমিয়ে পড়েন হলুদ ঈশ্বর

বিছানা ও আসবাব সঙ্গে যায়। সঙ্গে যায় দু-চারটে আলোর পুতুল। আর আমি যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠি
সাদা পাতার ওপর মুখ থুবড়ে পড়ি। এসব জানলা জানে, কোনও কোনও রাতে পাঠিয়ে দেয় 
শুকনো খড়খড়ে জ্যোৎস্না। হাতে নিলে ভেঙে যায়
হাত কেটে গড়িয়ে নামে ঈষৎ গোলাপি শূন্য—গোল ও স্বচ্ছ
বিছানা ও আসবাব বরাবর সন্দেহপ্রবণ, সারা দেহ শোঁকে, গোলাপি শূন্য মুখে নিয়ে রেখে আসে দূরে

তারপর বাড়ি আসে, অসংখ্য বাড়ি। ডানা ঝাপটায়
তাদের প্যাঁচানো সিড়ি দিয়ে কেবলই ওঠেনামে আলোর পুতুল
আর শহরের দীর্ঘ সিক্ত জিভ ঘুরে ফিরে আসে, কেবলই লেহন করে
                                                                      চাপ চাপ রক্তরজনী



2 comments:

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। ...