সব(সন্তানের) হৃদয়ে থাকিনা। আমি আমার মায়াশক্তিতে নিজেকে ঢেকে রাখি।
বোধহীন(সন্তান) কখনোই আমাকে বুঝতে পারে না।
(২৫) গীতা সপ্তম অধ্যায়
যখন থেকে আমি
হাঁটি হাঁটি পা পা তুমি আমার বোধের পদ্ম পাপড়ি পরত পরত খুলে আমার অস্তিত্বে
সাজিয়েছো আকার দিয়েছো। স্যার
বার্টান্ড রাসেলের কথায়, কোনো কিছু বোধে আনা মানেই তার সাথে সম্পর্ক পাতানো। তুমি আমার সাথে প্রকৃতি আকাশ মানুষ প্রেম রিপু
বিস্ময় আরও কতোকির সাথে সম্পর্ক পাতিয়েছো শুধু আমি কেন কেউই হিসাব রাখে না। এমনকি আমার হাত নাড়ানোর কায়দা হাসি সব তো তোমার
অনুকরণে। কে আর কৃতজ্ঞ বলো? আমার জনম বোধে
ওইসব অসংখ্য ভিত শিক্ষা পুরে দিয়ে আমার অস্তিত্বের শিকড় মজবুত করেছো। জন্মামাত্র প্রাণ ও মনের সাথে আমার শরীরের পরিচয়
করিয়েছে যে,সেই তো আমার পরম গুরু। মা।
কিন্তু আমি অকৃতজ্ঞ। কারোর কাছে এমনকি নিজের কাছেও সেকথা স্বীকার করিনা।
যখন আমি অবোধ
কিশোর তখন তুমি ছিলে রাতদিনের চলন্ত পাঠশালা।
বিছানায় স্নানে পথে ট্রেনে বাগানে গানে চিত্কারে তুমি ছিলে জীবনযাপনের অনায়াস বোধ। প্রকৃতির মহাশ্চর্য আত্মীয়তা সময় ঘড়ি অধ্যাত্ম অংক
ও বিশ্ববিচিত্র বীজ তো সেসময় তুমিই বপন করেছ।
কিন্তু আমি অকৃতজ্ঞ। কারোর কাছে এমনকি নিজের কাছেও সেকথা স্বীকার করিনা।
যখন শরীরে
যৌবন আসব আসব করছিল,শরীরে শরীরের লোভ, তুমি চোখে চোখ রেখে নীরবে শিখালে
দেহ নৌকো সামাল সামাল। আমি
প্রমত্ত। সেই থেকে তোমার স্পর্শযাদু আচলের গন্ধ তোমার
ভ্রূকুটি অবহেলায় সরিয়ে নিজেরই দেহের নিম্নগামী হলাম।
আমার শরীরে মনে ভরা যৌবন। পার্থিব
জীবনযাপনের জন্য অন্যের ধারকরা শিক্ষা বিচারবুদ্ধির শাখা প্রশাখা ডালপালা মেলে
আমাকে ভারী করে তুলতে লাগলো। survival of
the fittest এই সোচ্চারে অন্ধ স্বার্থপর হতে লাগলাম। তোমাকে হেয় করতে লাগলাম।
কিন্তু তুমি বিকারহীন,আমার অজান্তে তোমার স্বতষ্ফুর্ত শিক্ষা আমাকে বিপথগামী হতে দিলনা। আমি জীবিকাক্ষেত্রে প্রবেশ করলাম,তোমার প্রতি টান ক্ষীণ হতে লাগলো।
বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করলাম। আমি
তোমাকে আমার স্মৃতি থেকেও সরিয়ে দিলাম। তবু
তুমি করুণাময়ী, আমার একাকীত্বে এসে জীবনরহস্য শেখালে।
কিন্তু আমি অকৃতজ্ঞ। কারোর কাছে এমনকি নিজের কাছেও সেকথা স্বীকার করিনা।
No comments:
Post a Comment