Tuesday, September 11, 2018

একগুচ্ছ কবিতা- চয়নিকা






ভয়


আমার একটা ছোট্ট মেয়ে আছে।

প্রতিদিন স্কুলে যায় গুটি গুটি পায়ে,
না, ও ভয় পায় না, আমি পাই।

বিকালে খেলতে যায় বন্ধুর বাড়ি,
ও কোনো ভয় পায় না, আমি পাই।

সন্ধে বেলায় পড়তে যায় কোনো কোনোদিন,
ওর চোখে কোন ভয় থাকে না, আমি ভয় পাই।

বাড়িতে নতুন কেউ এলেই ও নতুন বন্ধুত্বে মেতে ওঠে,
ও তো একদমই ভয় পায় না, তবু আমি ভয় পাই।

আমি অফিস থেকে ফিরলে দৌড়ে আমার কোলে আসে,
ও বাবাকে ভয় পায় না, আমি পুরুষকে ভয় পাই।



সহজ করে


কখনো তোমার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে
পথের শেষ বাঁকে এসে বলতাম,
হাঁটা যেত আরও কিছুটা।
তুমি বলতে, সহজ করে বলতে পারো তো, ভালোবাসো।

কতবার তোমার কপালে ভালোবাসার
আলতো স্পর্শ আঁকতে আঁকতে বলেছি,
তুমি না বড্ড সুন্দর,
তুমি প্রতিবার বলতে, সহজ করে বললেই পারো,ভালোবাসো।

কোনো কোনো পড়ন্ত বিকালে
তোমার কোলে মাথা রেখে বলতাম,
তোমার জন্য আমার সব কবিতা রেখে যাবো।
তুমি বলতে, সহজ করে বলতে পারো না!ভালোবাসো।

যেদিন চলে গেলে অথবা এসেছিলে শেষবারের মতো,
বলেছিলে, সম্পর্কটা এখানেই শেষ হোক।
ইচ্ছা ছিল একবার পিছু ডেকে বলি,
সহজ করে বলতেই পারতে আর ভালোবাসো না।



সমুদ্র-স্নান


প্রতিদিন ভোর-রাতে তারারা আসে সমুদ্র স্নানে,
নোনা জল মাখে উজ্জ্বল শরীর জুড়ে।
উচ্ছল সমুদ্রের কোনো এক কোণে ভালোবাসা জমা হয় ঝিনুকের খোলে।

যেদিন কোনো তারা খসে যায়, সমুদ্রও কাঁদে এক বুক জল নিয়ে,
নোনতা জলে আরও একটু নুন মেশে।
ঝিনুক শরীরে দুঃখগুলোও জমে তিলেতিলে,
তারপর একদিন উজ্জ্বল মুক্তো হয়ে উঠে আসে বালুচরে।

জমা দুঃখেরাও মুক্ত হয় সেদিন,
সমুদ্র আবার অপেক্ষা করে তারা খসার।


মা


তোমার কথা ভাবতে গেলে আজকাল বড্ড মায়ের কথা মনে পড়ে।

আমার সকাল হওয়ার আগে মায়ের বেলা দুপুর হয়ে যেতো,
মায়ের গায়ের গন্ধটা সাবানের থেকে ধার করা কি না জানতে পারিনি কোনোদিন।
প্রতিদিন চান সেরে মা সিঁদুরের একটা মোটা দাগ আঁকত সিঁথিতে,
আমি মাঝে মাঝে দেখতাম আধঘুম চোখে, আবার উল্টোদিকে ঘুরে ঘুমিয়ে যেতাম।

সারাদিনের কাজের পরে মা একটু বিশ্রামের সময় পেলে
বাইরের ঘর থেকে ডাক আসতো বিকালের চায়ের, মা মুখের হাসিটা টেনে উঠে যেতো।
অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় সংসারের বোঝা বয়ে যেতো, বাকিদের উদাসীনতাও ছিল অদ্ভুত।
আমিও সবটা দেখতাম, কিন্তু চোখে পরতো না কখনও, যেন এটাই ভীষণ স্বাভাবিক।

আজকাল অবসর পেলেই এসব কথা মনে আসে, হয়তো খুব অপ্রাসঙ্গিক।
বহুদিন হল মা নেই আর, তুমিও মায়ের মতো না, অনেকখানি আলাদা,
তবু তোমায় দেখলে আজকাল আমার মায়ের কথা মনে পড়ে,
তোমার সাথে মাকে মেলাতে চাই বারবার, নানা ভাবে।

আচ্ছা সব প্রেমিকই কি প্রেমিকার অন্তরালে মাকে খুঁজে চলে?
তুমিও কি সন্তান দেখতে পাও আমার ভেতরে?
ভাবনাগুলো বড্ড গুলিয়ে যাচ্ছে আজকাল, বড্ড অপ্রাসঙ্গিক কথা এসে ভিড় করছে।
মা থাকলেও কি এমন হতো?

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। ...