Friday, September 14, 2018

দুটি চিঠি - অরুণিমা চৌধু রী






সোমেশ্বর কে দীপঙ্কর,
                            I I T admission সেরে তোমাকে লিখছি। এবার খুব tough ছিল Test; Good Luck, বেরিয়ে গেছি। অবশ্য এর জন্য আমার চেয়ে আমার মা, বাবা'র credit বেশি। যাক, নিশ্চিন্ত হওয়া গেছে। Medical ও Chance পেয়েছিলাম -- জানই তো, আমার Preference  বরাবরই I I T,Electrical।আমি ছাড়া আমাদের Batch mates আরও 12 জনের নাম Listed হয়েছে। B Section'র সোমদত্তা, অনিন্দিতা ও যাচ্ছে। প্রায় সকলেই Joint বেরিয়ে গেছে। এখনও জানিনা কে কোন line গেল। Trend wise Computer Technology prefer করবে অনেকে। এবার তো School'r বন্ধুদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হবার কথা। -- Future Carrier কথা ভাবলে যা হবেই। এই জন্য আমার বাবা,মা সামনের 10th July , Friday evening একটা party দিচ্ছেন। তুমি এসো কিন্তু! কি ঠিক করলে? আমাদের মতো আগে থেকে কিছু Target  করে এগোনোর পক্ষে নও।বলে এসেছ কোনদিনও নিজের হয়ে ওঠার against যাবে না। এই জন্য আমার মা জানতে চাইছেন তুমি কি ঠিক করলে। কোথায় admission নিলে? এত ভালো Result তোমার -- easily Joint পেয়ে যেতে। আসছ কিন্তু 10th,6 pm, OK? ভালো কথা, Our section's Rajib Bose finally joined their family business. দীপঙ্কর। 

দীপঙ্করকে সোমেশ্বর --
প্রিয় দীপঙ্কর, 
                 পরীক্ষার ফল ভালো হলে, -- কয়েকটি লেটার নম্বর সহ প্রথম বিভাগ এবং তারকা খচিত , তার মুক্তি যে জয়েন্টএ এমন টা শুধু তুমি নও, আমার শুভানুধ্যায়ীরা সকলেই বলছেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়র হয়ে কলকারখানা চালানো বা ডাক্তার হয়ে নার্সিংহোম চালানো দুই কাজের পক্ষেই আমি অযোগ্য। যদিও উচ্চমাধ্যমিকের ফল বলে মেডিক্যাল কলেজ বা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আমার ভবিষ্যৎ জীবিকার সফল ক্ষেত্র হতে পারতো। 
                   সাফল্য -- এই তিন  অক্ষরের শব্দ যা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে রাখে, কারণে অকারণে , আমার দুর্ভাগ্য যদি না বলতে চাও তো আমি বলি এ আমার সৌভাগ্য যে আমার বাবা, মা এ নিয়ে কখনও বিড়ম্বিত হন নি। ছেলেবেলা থেকেই কোন তাড়ায় তাড়িত নই আমি। বাবা, মা দুজনে নিজের নিজের কাজে বেরিয়ে যেতেন। ঠামি থাকতেন নিজের ঘরে আপন কাজ আর ভাবনায় মগ্ন। আমার স্নান, খাওয়ার তাড়া ছিলনা। পড়াশোনার তাড়া ছিলনা। পথের মতো দীর্ঘ এক একটা টানা দুপুর তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় আমার সঙ্গে চলতো। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরত , হেমন্ত,শীত, বসন্ত -- বাংলা দেশের ছ'টি ঋতুকেই যে কারণে আমি চিনতে পারি আলোর সঞ্চরণ দেখে। এদের ঘ্রাণ আমি চিনি।  সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা বাসা বানায় কখন, ডিম পেড়ে তা দিয়ে বাচ্চা বার করা, অক্লান্ত পরিশ্রম করে ছানাদের বড় করে তোলা,-- এই সব কত কিছু যে আমার নজর কাড়ত ! আরও বড় হয়ে স্কুলে যাওয়া আসার পথে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছি। আমার সঙ্গে চলেছে অগণিত মানুষ। ও দিকে বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি, মোটর বাইক ছুটছে ভীষণ তাড়ায়। আলাদা করে দেখো , দেখবে কী উদভ্রান্ত গতি। দুরন্ত। কিন্তু নিজে কখন ভিড়ের ভিতরে ঢুকে পড়েছি , আলাদা করে নিজের অস্তিত্ব টের পাইনি। চলছে, সংসার চলেছে তার নিজের তাড়ায়। এই যে আপাত উ্দভ্রান্ত গতি , এ যেন এক চলমান রথের রশির টান। নিজেকে এই গতির মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ায় এক স্বস্তি পেতাম, এখনও পাই। অস্বস্তির কাঁটা থাকে প্রত্যেক গতিকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চাওয়ায়। দেখি, পথের ধারে কলের জলে ছেলে, বুড়ো স্নান করছে , ছাতুওলা ছাতু মাপছে, দোকানি খরিদ্দারের সঙ্গে দর কষাকষি করছে -- এই সব আর ও কত টুকরো ছবি জুড়ে গড়ে ওঠে এক চলমান চিত্রমালা। এবং কোনও এক অদৃশ্য ব্যান্ড মাস্টারের নির্দেশে বেজে চলছে নিরবচ্ছিন্ন সিমফনি। কোনও বিরাম চিহ্নে কি এর সমাপ্তি? 
                     আমার বিশ্বাস মুহূর্ত যাপনের ভঙ্গিমায় বিন্যস্ত আমরা। তাকিয়ে দেখো গাছের দিকে; কী অপরূপ নীরব যাপন ! আর তা থেকে উঠে আসে প্রাণের আকুতি ।শাখা প্রশাখার প্রসারে , পল্লবে, ফুলে, ফলে। পাতা ঝরানোতেও।  ঠামির কাছে মহাভারত শুনেছি। কতো আখ্যান, কতো ঘটনা। একবার আমার প্রশ্ন ছিল, এত ছোটো ছোটো গল্প কেন। শুধু পাণ্ডব কৌরবদের মূল আখ্যানেই কি মহাকাব্য রচিত হতো না? ঠামি উত্তরে বলেছিলেন  মহাভারত কোন একজন ব্যাক্তি্র রচনা নয়। বহুজনের দীর্ঘ দিনের ভাবনা রচনার সম্মিলিত ঐক্য ।তাই এতো ব্যাপ্তি, এতো বৈচিত্র্য। 
                     পথ চলতে চলতে মহাভারত মনে আসে।প্রত্যেক বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন এক অখণ্ড জীবন- প্রবাহে বিলীন হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। সেদিন বাসে চলেছি। এক স্টপ থেকে উঠলেন এক বৃদ্ধা। বাসে এমন একজন মানুষ ছিলনা যে উঠে ঐ বৃদ্ধাকে জায়গা ছেড়ে দেবে -- এমনই নিশ্চেতন।আমার জায়গা ছেড়ে দিয়ে গর্ব হ'ল এই ভেবে যে আমিও বিরাটের এক টুকরো অংশ।ইমারতের একটি ইট ।পিঁপড়েদের দেখেছ? খাবারের সন্ধান পেলেই কেমন সুশৃঙ্খল সৈনিকদের মতো অক্লান্ত কাজ করে চলে ! এতে নিশ্চয় ওদের লাভ; সঞ্চয়ী বলে ওদের সুনাম আছে।কিন্তু শুদ্ধ প্রয়োজন মেটাবার তাগিদ বড় সংকীর্ণ মনে হয়। খুব তাড়াহুড়ো করে চলবার সময়ে দুই পিঁপড়ের মুখোমুখি দেখা হলে ওরা কথা বলে।অল্প কথা, কেজো কথা।--- যেন বলে ' তাড়াতাড়ি যা, সময় নষ্ট করিস না'। সৈনিকের কুচকাওয়াজের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ চলন দেখতে ভালো লাগে, কিন্তু গাছের নীরব ফুল ফোটা, ফল ধরার মতো বা গ্রহ নক্ষত্রের পরিক্রমণের শৃঙ্খলার মতো নয়। আমরা যে যেখানে থাকি, যে কাজই করি প্রাণের সাড়া থাকলে কাজ অর্থময় হয়ে ওঠে । না হলে জীবিকা শুধু জীবিকাই থেকে যায়, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেনা। 
                         আমি বিশুদ্ধ গণিত নিয়ে পড়া শুরু করেছি মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজে। প্রফেসর সান্যালের প্রিয় ছাত্র হয়ে তাঁর বাড়িতে প্রায় ই যাই অঙ্ক নিয়ে। তিনি এর জন্য কোন দক্ষিণা নেন না। বরঞ্চ সকালের জলযোগের ব্যবস্থা থাকে ভালই। 
                           ১০ই জুলাই অবশ্যই যাব তোমার বাড়ি। তোমাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দ থেকে বাদ পড়তে চাই না।
 তোমাদের সোমেশ্বর।

1 comment:

  1. Sundar ebong sabolil ! Amader praner katha bolechen. Patha bhavan e ei drishti diyei baro hoyechi. Apnar chobir matoi, lekhar apekshay thaklam...

    ReplyDelete

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। ...