Thursday, September 13, 2018

একগুচ্ছ কবিতা তন্ময় ভট্টাচার্য






শ্রেষ্ঠ কবিতা

তোমার তো খালি অন্যের লেখা ভালো লাগে
আমাকে বল না একটা কথাও, যাতে পরের
লেখাগুলো আরও সমাধি ও মৃদু হয়ে ওঠে

অথচ পারি না, আবেগে আবার পা পিছলোয়
গড়াতে গড়াতে যেখানে থামি, তা তোমার মুখ
ঝোড়ো হাওয়া দিই, তুমি ভাবো, বুঝি বয়েস কম

আমার শ্রেষ্ঠ কবিতা তোমায় ছেড়ে চলে যাওয়া, অসংযম!

ভ্রষ্ট

একা হলে সব যায় - সব দীক্ষা, সব সংবরণ
শুধুই একটা মেঘ, পুরাতনী, কাছে এসে
বলে আর পারছে না ধরে রাখতে, আমি তাকে
পুকুর বিছিয়ে দিই, উঁচু থেকে ভালো লাগে এমন গাছের
সঙ্গে আমার বেশ বন্ধুত্ব আজকাল, তাও দিই, এর ফলে
আমাকে জোচ্চোর ভেবে সরে যায়, কার দিকে, অন্য কারও দিকে
সেসব ভাবি না, শুধু দেখে নিই চলে যাচ্ছে - সব দীক্ষা, সব সংবরণ

পাপ

মিথ্যা সন্দেহ করে আমি তার হাসির কারণ
নষ্ট করেছি। শুধু তাই নয়, চিরে-চিরে
আমি তার প্রতি অঙ্গে ভরে দিচ্ছি পাপ, যা সে
করেনি এবং জানি করতে পারে না কোনোদিন

ফলে সে বিষিয়ে উঠছে। আর আমি, দূর থেকে
যেহেতু বিষাক্ত তাই ছেড়ে যাচ্ছি, রোজ-রোজ,
একটু-একটু করে ছেড়ে যাচ্ছি তাকে, সে তো
আমাকে বিশ্বাস করে, ভাবছে ভালোর জন্য সব

এভাবে শব্দের কাছে, ভাষা ও শিল্পের কাছে
কতদিন হয়ে গেল কবিতা করিনি অনুভব!

জমানা

আবার মরছে মানুষ, আমরা কবিতার সুখী তর্ক তুলছি
শরৎ রচনাবলীর সুবাদে পাওয়া গেল যত নিরীহ চেহারা
তাদের দুঃখে কেঁদে ভাসাচ্ছি; 'লেখালিখি করে কিস্যু হয় না'
এমন বাক্যে টিপসই দিতে দৌড়ে যাচ্ছি আনাচে-কানাচে
কিংবা তোমায় চুমু খেতে কত রাত্তির হবে সে-দুশ্চিন্তা
আমাদের থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে নাড়িভুঁড়ি ফেটে পড়ার দৃশ্য
এভাবে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়ব নাউজুবিল্লাহ্‌ যতক্ষণ না
আমার পাশের লতিকাটি লাথ কষিয়ে বলবে আগুন জ্বলছে



অবসরে

এভাবে সম্পর্ক রাখা যায় না মোটেই

তোমার উচিৎ ছিল ভয় পাওয়া, কেঁদেকেটে
আমাকে বুঝিয়ে বলা, আসলে করনি কোনো ভুল

সরিয়ে-নিচ্ছি হাতে বারবার ছোঁয়ানো আঙুল -
এসব উচিৎ ছিল। কেঁপে-কেঁপে। তা না-করে
অবরুদ্ধ কথাটিকে এত স্বার্থে ঢেলে নিলে

হারিয়ে ফেলার ভয়ে ফিরে যাচ্ছি, শ্বাস টেনে
বলছি এবারকার মতো ঘর দিলাম, কেমন?

মৃদু সারল্য ছাড়া, জবাবে তেমন কিছু নেই...
হতবাক

বিশ্বাসঘাতকতার রঙে ভরে উঠছে আকাশ। প্রতিটা মানুষ নিজেরটুকু বুঝে নিয়ে ভাব দেখাচ্ছে যেন কিছুই হয়নি, এই শহরে শুশ্রূষা আজও জোগাড় হয়েই যায়। করতলে সেই ভাবটুকু ধরি। আঙুলের ফাঁক জমে আছে হতাশা। জলের মতো। ডোবাতে থাকে আর একসময় আছড়ে ফ্যালে খাদে। তখন শুধু মুখ তুলে তাকিয়ে থাকা ওপরের পাথুরে জমি আর ব্যর্থ গাছটির দিকে ছুঁড়ে দেওয়া একটুকরো হাসি। সে যেন বোঝে, পারল না। যেন বোঝে, ডাল ঝাঁকিয়ে ফেলে দেওয়া এক অর্থে নিজেরই পরাজয়। তলিয়ে যেতে থাকি। অন্যের ভালো করতে গিয়ে, সমুদ্রসমান কান্না চেপে ধরি গলার ভিতর।

বাতুল
'শেষটুকু বড় কষ্ট!' বলে
যে কৃপণ আর ফিরল না

তুমি তার বাকি দৈন্যগানে
গুরুমুখী হয়েছ, সাধনা

হলফ

তোমাকে হলফ করে বলে যাচ্ছি, আয়নার লোক -
চাইলে কুপিয়ে মারো, পুঁতে দাও ন'হাত গভীরে
কৃমি ও কেঁচোর খাদ্য হয়ে ভাবব এটাই কবিতা
চুঁইয়ে এসেছ দেখে দুটো তর্ক হবে তো বটেই
তবু অন্য কথা ছেড়ে ডাকামাত্র ফেরত যাব না

ভূমিজ

নইলে, কারোর কাছে প্রাণপণে ভেঙে পড়া যেত। তার শ্বাস
নিজেই টেনেছি ভেবে উঠেও দাঁড়ানো যেত আবার, আবার...
পিছনে তাকালে বোঝা যেত ইচ্ছে বসে আছে আড়মোড়া ভেঙে
যেতে যে হলই, কারণ খুঁজতে গেলে মনে পড়ে তার
পাথর জড়িয়ে ধরা –

আমি কি পাথর? মৃৎ নই?
আগামীকালের প্রতি বিশ্বাস রেখো না, শনিবার!


টানাপোড়েন

এরপরও ফিরে এল, গিয়ে বসল পাশটিতে, নখের ডগায়
হতাশা মজুত তবু টোকা দিল, সাড়া দিচ্ছে, দেবে তো বটেই
এর বেশি কিছু পারত? কোনোদিন? পেরেছে ভেবেও
আবার পিছিয়ে আসা, নখ পাল্টে দেখে নেওয়া কতটা রঙিন
তবে কি বসিয়ে দেবে? ব্যথার তো ভালোমন্দ নেই
যা ছিল, রাখার জন্য এত তীক্ষ্ণ চুপচাপ, পড়োশি টেবিল
দু'হাতে জড়িয়ে নিল, মাথাভর্তি ঝিমঝিম, তাহলে এবার
এই যে যাওয়ার ভঙ্গি, একেবারে?
                     আগে পেরে দেখালে হত না?













No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। ...